শ্বসন (চতুর্থ অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - | NCTB BOOK
246
246

প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন আছে। জীবদেহে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের জৈবনিক প্রক্রিয়ার জন্য শক্তি প্রয়োজন। জীব কোষের সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত স্টাচ, শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটের অণুতে শক্তি সঞ্চিত থাকে। সকল জীবকোষের জৈবক্রিয়ার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। প্রকৃতপক্ষে অক্সিজেন দ্বারা খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তি থেকে সঞ্চিত হয়, তাকে গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করাই শ্বসনের মুখ্য উদ্দেশ্য। এই গতিশক্তি ও তাপশক্তির দ্বারা জীব খাদ্য গ্রহণ, চলন, রেচন, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে থাকে। শ্বসন এক প্রকার দহন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন দ্বারা খাদ্য জারিত হয়ে শক্তি নির্গত হয়।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

  • জীবের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • চিত্রের সাহায্যে প্রাণীর শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অংশসমূহের কাজ বর্ণনা করতে পারব।
  • শ্বসনতন্ত্রের রোগের কারণ ও রোগের লক্ষণ বর্ণনা করতে পারব।
  • শ্বসনতন্ত্রের রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কৌশল ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • সালোকসংশ্লেষণ এবং শ্বসন প্রক্রিয়ার তুলনা করতে পারব।
  • প্রাণীর শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অংশসমূহের চিত্র অঙ্কন করতে পারব।

Content added By

শ্বসন কী? (পাঠ ১)

175
175

জীবদেহে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। শ্বসন দ্বারা এই শক্তি উৎপন্ন হয়। শ্বসনের সময় জীবদেহে কোষস্থিত খাদ্যকে দহন করার জন্য অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। এর ফলে উৎপন্ন হয় শক্তি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড। সুতরাং যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ সঞ্চিত খাদ্যবস্তু অক্সিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে জারিত হয়ে খাদ্যস্থ রাসায়নিক শক্তিকে গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত করে এবং ফলশ্রুতিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি উৎপন্ন হয় তাকে শ্বসন বলে।

শ্বসন একটি বিপাকীয় ক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া চলাকালে প্রতিটি জীব পরিবেশ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। নিম্নশ্রেণির কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণী অক্সিজেন ছাড়া শ্বসনক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে সকল ক্ষেত্রে কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতিটি সজীব কোষে দিন রাত্রি সব সময় শ্বসন কার্য ঘটে।

Content added By

জীবজগতে শ্বসন (পাঠ ২)

100
100

শ্বসন একটি অন্তঃকোষীয় বিপাক প্রক্রিয়া এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের বিভিন্ন সজীব কোষে শ্বসন প্রক্রিয়াটি মুলত একই। কিন্তু বিভিন্ন জীবের অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন পদ্ধতিটি ভিন্নরুপ। উদ্ভিদ দেহে শ্বসন কালে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিনিময় অপেক্ষাকৃত সরল। উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট শ্বসন অঙ্গ নাই। পাতার পত্ররন্ধ্র, কান্ডের লেন্টিসেল এবং অন্তঃকোষের মাধ্যমে বায়ু দেহঅভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পানিতে নিমজ্জিত উদ্ভিদগুলো সমগ্র দেহতলের সাহায্যে অক্সিজেন শোষণ করে। প্রাণিদেহেও শ্বসন বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে নানাভাবে সম্পন্ন হয়। নিম্নশ্রেণির প্রাণীতে প্রধানত ত্বক ও ট্রাকিয়ার মাধ্যমে শ্বসন হয়। উন্নত প্রাণীদের শ্বসনে গ্যাসীয় বিনিময়ের জন্য বিশেষ ধরনের শ্বসন অঙ্গ আছে। যেমন- মাছ ও ব্যাঙাচি ফুলকার সাহায্যে এবং স্থলজ মেরুদণ্ডীরা ফুসফুসের সাহায্যে শ্বসন সম্পন্ন করে।

উদ্ভিদের শ্বসন
উদ্ভিদ দেহে শ্বসন প্রক্রিয়ায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত শর্করা জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি উদ্ভিদ দেহে বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদ দেহে দুই প্রকার শ্বসন দেখা যায়।
ক) সবাত শ্বসন: অক্সিজেনের উপস্থিতিতে যে শ্বসন সম্পন্ন হয় তাকে সবাত শ্বসন বলে। সকল উন্নত উদ্ভিদে সবাত শ্বসন ঘটে।
খ) অবাত শ্বসন: অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে যে শ্বসন সম্পন্ন হয় তাকে অবাত শ্বসন বলে। ব্যাকটেরিয়া জাতীয় আদিকোষী জীব দেহে অবাত শ্বসন ঘটে।

শ্বসনকালে শক্তি উৎপন্ন হওয়ার প্রমাণ
শ্বসনে যে শক্তি (তাপ) উৎপন্ন হয় তা নিম্নে বর্ণিত পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করা যায়।
উপকরণ: দুটি থার্মোফ্লাক্স, দুটি থার্মোমিটার, অঙ্কুরিত ছোলা বীজ, পানিতে সিদ্ধ ছোলা বীজ ও ছিদ্রযুক্ত রাবারের ছিপি।
পরীক্ষা: অঙ্কুরিত ছোলা বীজগুলোকে একটি থার্মোফ্লাক্সের মধ্যে রেখে একটি ছিদ্রযুক্ত ছিপি দিয়ে মুখটি বন্ধ করতে হবে। এরপর ছিপির ছিদ্রের মধ্য দিয়ে একটি থার্মোমিটার এমনভাবে প্রবেশ করতে হবে, যাতে থার্মোমিটারের পারদপূর্ণ প্রান্তটি অঙ্কুরিত ছোলা বীজগুলোর মধ্যে প্রোথিত থাকে। অনুরূপভাবে অপর থার্মোফ্লাক্সটিতে সিদ্ধ ছোলা বীজগুলো রাখতে হবে এবং অপর থার্মোমিটারটি স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি থার্মোমিটারের পারদ রেখার অবস্থান চিহ্নিত করে রাখতে হবে।

পর্যবেক্ষণ: কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে জীবন্ত অঙ্কুরিত ছোলা বীজযুক্ত থার্মোফ্লাক্সের উষ্ণতার বৃদ্ধি ঘটায় থার্মোমিটারের পারদরেখার পরিবর্তন ঘটেছে। সিদ্ধ বীজযুক্ত থার্মোফ্লাক্সের উষ্ণতার বৃদ্ধি হয়নি অর্থাৎ থার্মোমিটারের পারদরেখা অপরিবর্তিত আছে।পর্যবেক্ষণ: কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে জীবন্ত অঙ্কুরিত ছোলা বীজযুক্ত থার্মোফ্লাক্সের উষ্ণতার বৃদ্ধি ঘটায় থার্মোমিটারের পারদরেখার পরিবর্তন ঘটেছে। সিদ্ধ বীজযুক্ত থার্মোফ্লাক্সের উষ্ণতার বৃদ্ধি হয়নি অর্থাৎ থার্মোমিটারের পারদরেখা অপরিবর্তিত আছে।

  • জীবন্ত ছোলা বীজযুক্ত থার্মোফ্লাক্সের থার্মোমিটারের পারদ রেখার কেন পরিবর্তন ঘটল?
  • এতে কী প্রমাণিত হলো?
Content added By

প্রাণীর শ্বসন (পাঠ ৩)

131
131

আমরা নাক দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করি। শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় আমরা কী গ্যাস গ্রহণ ও ত্যাগ করি? প্রাণী ও উদ্ভিদ বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। তাদের এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে সারাজীবন। তবে প্রাণী ও উদ্ভিদের বেলায় গ্যাস গ্রহণ ও বর্জন করার প্রক্রিয়া ভিন্ন প্রকৃতির। উদ্ভিদ পাতায় অবস্থিত স্টোমাটা নামক এক প্রকার ছিদ্রের মাঠ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে। নিম্ন ও উচ্চশ্রেণির প্রাণীর দেহে গ্যাসের আদান প্রদান ঘটে বিভিন্ন প্রকার অঙ্গের মাধ্যমে। যেমন- ফুলকা, ফুসফুস। যে অঙ্গগুলো শ্বসনকার্য চালানোর কাজে অংশ নেয় তাদের একত্রে শ্বসনতন্ত্র বলে। মানব শ্বসনতন্ত্র নিম্নলিখিত অঙ্গগুলো নিয়ে গঠিত।

১. নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ
২. নাসা গলবিল
৩. স্বরযন্ত্র
৪. শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া
৫. ক্লোম শাখা বা ব্রংকাস
৬. ফুসফুস
৭. মধ্যচ্ছদা

১. নাসার ও নাসাপথ: নাসিকা মুখগহ্বরের উপরে অবস্থিত একটি ত্রিকোণাকার গহ্বর। এটি সামনে নাসিকা ছিদ্র হতে পশ্চাতে গলবিল পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি পাতলা পর্দা দিয়ে এটি দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর সম্মুখভাগ লোম ও পশ্চাৎ দিক ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। আমরা নাক দিয়ে যে বায়ু গ্রহণ করি তাকে প্রশ্বাস বলে। প্রশ্বাস বায়ুতে ধূলিকণা, রোগজীবাণু থাকলে তা এই লোম ও ঝিল্লিতে আটকে যায়।

চিত্র-৪.২: নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ

২. নাসা গলবিল: নাসা গলবিল হলো নাসাপথের শেষ অংশ যা গলবিলের সাথে মিশেছে। গলবিল পথে শ্বাসনালিতে বাতাস প্রবেশ করে।

৩. স্বরযন্ত্র: গলবিল ও শ্বাসনালির সংযোগস্থলে স্বরযন্ত্র অবস্থিত। স্বরযন্ত্রে স্বর সৃষ্টিকারী স্বররজ্জু বা ভোকাল কর্ড থাকে। তাই একে স্বরযন্ত্র বলে। স্বরছিদ্রের মুখে একটা ঢাকনা থাকে। এটি খাদ্য গ্রহণের সময় স্বরযন্ত্রকে ঢেকে রাখে, যাতে এতে খাদ্য ঢুকতে না পারে আবার শ্বাস গ্রহণের সময় খুলে যায়।

৪. শ্বাসনালি: খাদ্যনালির সম্মুখে অবস্থিত স্বরযন্ত্র থেকে শুরু হয়ে ক্লোম শাখা পর্যন্ত বিস্তৃত নালিকে শ্বাসনালি বলে। শ্বাসনালির মাধ্যমে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে।

৫. ক্লোম শাখা বা ব্রঙ্কাস: শ্বাসনালি ফুসফুসের কাছে এসে ডান ও বাম দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে ডান ও বাম ফুসফুসে প্রবেশ করে। এদেরকে ডান ও বাম ক্লোম শাখা বা ব্রঙ্কাই (একবচনে ব্রঙ্কাস) বলে। ফুসফুসে প্রবেশ করার পর এই শাখাদ্বয় অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়। এদেরকে ব্রংকিওল বলে। ব্রঙ্কাইয়ের গঠন শ্বাসনালির মতো।

৬. ফুসফুস : বক্ষগহ্বরের ভিতর দুটি ফুসফুস হৃৎপিণ্ডের দুই পাশে অবস্থিত। এটা স্পঞ্জের মতো নরম ও কোমল। ডান পাশের ফুসফুসটি বাম পাশের ফুসফুসের চেয়ে সামান্য বড়ো। ফুসফুস দুই ভাজবিশিষ্ট পুরা নামক একটি ঝিল্লি বা পর্দা দ্বারা আবৃত। দুই ভাঁজের মধ্যে এক প্রকার পিচ্ছিল পদার্থ থাকে। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস কাজে, ফুসফুস ও বক্ষগাত্রের সাথে কোনো ঘর্ষণ লাগে না। ব্রঙ্কাস প্রতিপাশে ফুসফুসে প্রবেশ করে অসংখ্য শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়। এই সূক্ষ্ম ব্রংকিওলগুলো বায়ুথলি বা বায়ুকোষে প্রবেশ করে। প্রত্যেকটি বায়ুথলি পাতলা এ্যাপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এ কোষগুলো কৈশিক জালিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত। কোষগুলোতে বায়ু প্রবেশ করলে এগুলো বেলুনের মতো ফুলে উঠে ও পরে আপনা আপনি কুঞ্চিত হয়ে যায়। বায়ুথলি ও কৈশিক জালিকা উভয়ের প্রাচীর এত পাতলা যে, সহজেই এগুলোর মধ্য দিয়ে বায়ু আদান-প্রদান করতে পারে।

৭. মধ্যচ্ছদা: যে মাংসপেশি বক্ষগহ্বর ও উদরগহ্বরকে পৃথক করে রেখেছে তাকে মধ্যচ্ছদা বলে। এটা দেখতে অনেকটা প্রসারিত ছাতার মতো। মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হলে নিচের দিকে নামে। তখন বক্ষগহ্বরের আয়তন বাড়ে। আবার এটা যখন প্রসারিত হয় তখন উপরের দিকে ওঠে এবং বক্ষগহ্বর সংকুচিত হয়। মধ্যচ্ছদা সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

নিজেরা কর: চার্ট দেখে শ্বসনতন্ত্রের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন কর এবং ফুসফুসের কাজ বর্ণনা কর।

নতুন শব্দ: শ্বাসনালি, বায়ুথলি, স্বরযন্ত্র, ব্রংকিওল, ব্রঙ্কাস, ক্লোম শাখা ও অনুক্লোম শাখা।

Content added By

শ্বসন পদ্ধতি (পাঠ ৪-৬)

91
91

আমরা নাক দিয়ে বাতাস নিই আবার ছেড়ে দিই। একেই আমরা সাধারণত শ্বসন বলে থাকি। আমাদের এ ধারণা ভুল। আমাদের বুক হাপরের মতো অবিরত সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এতে ফুসফুসের আয়তন বাড়ে ও কমে। ফুসফুস অবিরত সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিত্যাগ করে। এভাবে অবিরত অক্সিজেন নেওয়া ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিত্যাগ করাই শ্বাসক্রিয়া নামে পরিচিত। এটা শ্বসনের একটি ধাপ। শ্বসন প্রক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা- ১. বহিঃশ্বসন ও ২. অন্তঃশ্বসন।

১. বহিঃশ্বসন: যে প্রক্রিয়ায় ফুসফুসের মধ্যে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে তাকে বহিঃশ্বসন বলে। এ পর্যায়ে ফুসফুস ও রক্ত জালিকা বা কৈশিক নালির মধ্যে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বিনিময় ঘটে। বহিঃশ্বসন দুই পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। যথা-

(i) প্রশ্বাস বা শ্বাস গ্রহণ পরিবেশ থেকে আমরা যে অক্সিজেনযুক্ত বায়ু গ্রহণ করি একে শ্বাস গ্রহণ বা প্রশ্বাস বলে। প্রশ্বাসের সময় মধ্যচ্ছদা ও বক্ষপিঞ্জরাস্থির মাঝের পেশি সংকুচিত হয়।
(ii) নিঃশ্বাস: প্রশ্বাসের পর পরই নিঃশ্বাস পর্যায় শুরু হয়। এ পর্যায়ে মধ্যচ্ছদা ও পিঞ্জরাস্থির পেশিগুলো শিথিল ও প্রসারিত হয় এবং ফুসফুস আয়তনে ছোটো ও সংকুচিত হয়। ফলে বায়ুথলির ভিতরের বায়ু, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ফুসফুস থেকে ব্রঙ্কাস ও ট্রাকিয়ার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে নাসারন্ধ্র দিয়ে বাইরে নির্গত হয়।

নিজেরা কর
তুমি তোমার সহপাঠীর নিঃশ্বাস ত্যাগ ও প্রশ্বাস নেওয়া লক্ষ কর। মধ্যচ্ছদা চেপে রেখে এ কাজটি করার চেষ্টা কর। কী ঘটে? কেন ঘটে? তা ব্যাখ্যা কর।

২. অন্তঃশ্বসন: অন্তঃশ্বসন প্রক্রিয়ায় দেহকোষস্থ খাদ্য অক্সিজেনের সাহায্যে জারিত হয়ে গতিশক্তি ও
তাপশক্তিতে পরিণত হয়। ফুসফুসের রক্তে যে অক্সিজেন প্রবেশ করে তা রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের দূরবর্তী কৈশিকনালিতে পৌঁছায়। কৈশিকনালির গাত্র ভেদ করে আন্তঃকোষস্থ রস হয়ে কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। তারপর এটি কোষের ভিতরের খাদ্যের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপন্ন করে। এর ফলে তাপশক্তি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। এই কার্বন ডাইঅক্সাইড আবার রক্ত দ্বারা বাহিত হয়ে ফুসফুসে ফেরত আসে।

নতুন শব্দ: বহিঃশ্বসন, অন্তঃশ্বসন, প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস।

শ্বসনতন্ত্রের প্রবাহ চিত্র নিম্নে দেখানো হলো:

নিজেরা কর
বেশ কয়েকবার উঠাবসা কর অথবা দৌড়াও। তারপর ঘড়ি ধরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস গণনা কর। দেখবে বিশ্রামরত অবস্থায় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস যত ছিল, পরিশ্রমের ফলে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তোমার ছোটো ভাইবোনদের প্রত্যেকের প্রতি মিনিটে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের হার গণনা কর।
Content added By

শ্বসনতন্ত্রের সাধারণ রোগ (পাঠ ৭)

75
75

হাকিম সাহেব যক্ষ্মায় ভুগছেন। প্রফুল্ল বাবুর অ্যাজমা বা হাঁপানি। ছোট্ট শিশু বিকাশের নিউমোনিয়া হয়েছে। এ রোগগুলোর কারণ কী? কী ধরনের সাবধানতা গ্রহণ করলে তাদের এ রোগগুলো হতো না? এ রোগগুলোর প্রতিকার কী? এ রোগগুলোর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা জেনে নিলে রোগের আক্রমণ থেকে অনেকাংশে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

যক্ষ্মা
যক্ষ্মা একটি অতি পরিচিত সংক্রামক রোগ। এ রোগ সহজে সংক্রমিত হয়। যারা অধিক পরিশ্রম করে, দুর্বল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে এবং অপুষ্টিতে ভোগে বা যক্ষ্মা রোগীর সাথে বাস করে তারা এ রোগের শিকার হয়ে থাকে।

কারণ: এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এই রোগ হয়।

লক্ষণ:

  • দেহের ওজন কমতে থাকে ও শরীর দুর্বল হতে থাকে।
  • খুসখুসে কাশি হয়, কখনো কখনো কাশির সাথে রক্ত পড়তে পারে।
  • বিকালের দিকে অল্প জ্বর হয়, রাত্রে শরীরে ঘাম হয়।
  • বুক বা পিঠে ব্যথা হয়, মাঝে মাঝে পেটে অসুখ দেখা দেয়।

প্রতিকার

  • রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী, সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না।

প্রতিরোধ

  • যক্ষ্মা প্রতিষেধক টিকা হলো বি.সি.জি.। জন্মের পর থেকে এক বছরের মধ্যে শিশুকে এই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জন্মের পরপরই যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
  • যক্ষ্মা রোগীকে পৃথক রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো হাসপাতালে পাঠানো। এতে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হয়।
  • রোগীর কফ-থুতু মাটিতে পুঁতে ফেলা দরকার। কারণ এসবে অসংখ্য জীবাণু থাকে।
  • হাঁচি-কাশির সময় মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।
  • যক্ষ্মা রোগীর কাছে শিশুদেরকে যেতে দেওয়া উচিত নয়।

নিউমোনিয়া
নিউমোনিয়া একটি ফুসফুসের রোগ। অত্যধিক ঠান্ডা লাগলে নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে। হাম, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগের পরে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে। শিশুদের জন্য এটি একটি মারাত্মক রোগ। কারণ: এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়।

লক্ষণ: কাশি ও শ্বাস কষ্ট হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় নাকের ছিদ্র বড়ো হয়। বেশি জ্বর হয়। কাশির সময় রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করে।

প্রতিকার: অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর ঔষধ ও পথ্য খাওয়া দরকার। বেশি করে পানি ও তরল পদার্থ (স্যুপ, ফলের রস) পান করতে হবে। রোগীকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

প্রতিরোধ: শিশুদের হাম বা ব্রংকাইটিস হলে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ব্রংকাইটিস
শ্বাসনালির সংক্রমণকে ব্রংকাইটিস বলে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ধুলাবালি মিশ্রিত আবহাওয়া, ঠান্ডা লাগা এবং ধূমপান থেকে এ রোগ হতে পারে।

কারণ: এক ধরনের ভাইরাস থকে এ রোগ হয়।
লক্ষণ : কাশি ও শ্বাস কষ্ট হয়। কাশির সাথে কফ থাকে। জ্বর হয়, রোগী ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে।
প্রতিকার: ধূমপান বন্ধ করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাঁপানি বা অ্যাজমা
হাঁপানি ছোঁয়াচে বা জীবাণুবাহিত রোগ নয়।
কারণ: বিশেষ কোনো খাবার, বাতাসে উপস্থিত ধুলাবালি অথবা ফুলের রেণু প্রশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি থেকে হাঁপানি হতে পারে।
ব্যতিক্রম: বছরের বিশেষ ঋতুতে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেড়ে যায়।

লক্ষণ: হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো হয়। রোগী জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে। ফুসফুসের বায়ুথলিতে ঠিকমত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না বা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগীর কষ্ট হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় রোগীর পাঁজরের মাঝের চামড়া ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। কাশির সাথে কখনো কখনো সাদা কফ বের হয়। জ্বর থাকে না। রোগী কোনো শক্ত খাবার খেতে পারে না। কখনো কখনো বমি হয়। রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রতিকার: আলো-বাতাসপূর্ণ গৃহে বসবাস করা। যে সকল জিনিসের সংস্পর্শে আসলে বা খেলে হাঁপানি বাড়ে, তা থেকে বিরত থাকা। যেমন- পশমি কাপড়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা। ধোঁয়া, ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। ধূমপান পরিহার করা।

ঔষধ সেবনে শ্বাসকষ্টের কিছুটা লাঘব হয় বটে, কিন্তু রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না। তাই শ্বাসকষ্ট লাঘবে রোগীর সাথে সব সময় ঔষধ রাখা অত্যন্ত জরুরি।

তোমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে সালোকসংশ্লেষণ সম্পর্কে জেনেছ। তোমরা পূর্বজ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিম্নের কাজটি কর।

কাজ: দলগত কাজের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের পার্থক্য লিখে একটি পোষ্টার কাগজে উপস্থাপন কর।

এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম
শক্তির জন্য প্রতিটি জীবের শ্বসন অপরিহার্য।

পত্ররন্দ্র ও রক্ষীকোষ: পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষগুলো পত্ররন্দ্রকে খোলা বা বন্ধ রাখতে সাহায্য করে। রক্ষীকোষে ক্লোরোফিল থাকে। তাই দিনের বেলায় রক্ষীকোষে সালোকসংশ্লেষণ ঘটে এবং এর ফলেই পত্ররন্ধ্র খুলে যায়। প্রতিটি জীবে শ্বসন অপরিহার্য।

বহিঃশ্বসন: ফুসফুসের বায়ুথলি থেকে অক্সিজেন কৈশিকনালির রক্তে প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড রক্ত থেকে বায়ুথলিতে আসে। ফুসফুসের এই গ্যাসীয় আদান-প্রদানকে বহিঃশ্বসন বলে। প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস এই দুই প্রক্রিয়া বহিঃশ্বসনের অন্তর্গত।

অন্তঃশ্বসন: কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিতরে কতগুলো এনজাইমের নিয়ন্ত্রণাধীনে খাদ্যের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়া ঘটে। এভাবে অন্তঃশ্বসন ক্রিয়া ঘটে।

লসিকা : এক রকম স্বচ্ছ, ঈষৎ মৃদু ক্ষারীয় পদার্থ। এটা এক ধরনের রূপান্তরিত কলারস।

Content added || updated By

অনুশীলনী

79
79

শূন্যস্থান পূরণ কর।

১. ___________ খাদ্য তৈরি হয় কিন্তু _________ খাদ্য জারিত হয়।

২. জীবকোষের __________ নামক সাইটোপ্লাজমিয় অঙ্গাণুকে কোষের শক্তিঘর বলে।

৩. ফুসফুস অসংখ্য _____________ দ্বারা গঠিত।

8. ____________ একটি ছোঁয়াচে রোগ।

৫. শ্বসন একটি _______ প্রক্রিয়া।

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

১. অন্তঃশ্বসন কাকে বলে?
২. নিউমোনিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণ কী?
৩. শ্বসনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর।
৪. বায়ুথলির কাজ উল্লেখ কর।
৫. উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. কোনটি উদ্ভিদের শ্বসন অঙ্গের নয়?

ক. ত্বক
খ. লেন্টিসেল
গ. রক্ষীকোষ
ঘ. পত্ররন্ধ্র

২. নিম্নশ্রেণির প্রাণীরা শ্বাসকার্য চালায়-
i. ফুলকা ও ত্বকের সাহায্যে
ii. ত্বক ও ট্রাকিয়ার মাধ্যমে
iii. ফুসফুস ও ফুলকার সাহায্যে
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i
খ. ii
গ. i ও ii
ঘ. i ও iii

উদ্দীপকটি লক্ষ কর এবং ৩, ৪ ও ৫ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।

৩. W চিহ্নিত অংশটির নাম কী?

ক. অ্যালভিওলাস
খ. ব্রঙ্কাস
গ. ব্রঙ্কিওল
ঘ. ট্রাকিয়া

৪. উদ্দীপকের কোন অংশটিতে O2 ও CO2 এর বিনিময় ঘটে?

ক. V
খ. W
গ. X
ঘ. Y

৫. V এর সংক্রমণে কোন রোগ হয়?

ক. অ্যাজমা
খ. ব্রংকাইটিস
গ. নিউমোনিয়া
ঘ. যক্ষ্মা

সৃজনশীল প্রশ্ন

১।

ক. পুরা কী?
খ. নিউমোনিয়া একটি মারাত্মক রোগ- ব্যাখ্যা কর।
গ. চিত্রে সংঘটিত প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. F উপাদানটি E অংশে প্রবেশের ফলে সৃষ্ট সমস্যা প্রতিরোধের উপায়গুলো বিশ্লেষণ কর।

২।


ক. শ্বসন কী?
খ. পত্ররন্ধ্র কীভাবে শ্বসনে সাহায্য করে? ব্যাখ্যা কর।
গ. Y ও Z এর মধ্যে কোনটি X এর উপাদান সরাসরি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. গ্যাসীয় বিনিময়ের ক্ষেত্রে E ও F কীভাবে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল যুক্তিসহ লিখ।

নিজেরা কর
শ্বসনতন্ত্রের চিত্র এঁকে চিহ্নিত কর। শ্বসনে ফুসফুসের গুরুত্ব আলোচনা কর।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;